বিশ্বজয়ী ভারতের কন্যারা!
ভাস্কর চক্রবর্তী, কলকাতা
স্বপ্ন সত্যি হল ভারতীয় ক্রিকেটের। ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে লেখা হয়ে রইল ২০২৫ সালের এই দিনটি। প্রথমবারের মতো আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতল ভারত। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে বিশ্বজয়ের মুকুট উঠল হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বাধীন ভারতের মাথায়। ফাইনালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক লরা উলফার্ট বলেছিলেন— “ভারতকে সাইলেন্ট করব।” কিন্তু ফল হল ঠিক উল্টো। গর্জনই সার, মাঠে পুরোপুরি সাইলেন্ট হলেন প্রোটিয়ারা।
বৃষ্টি-জর্জরিত সকালে দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় ম্যাচ। কিন্তু শুরু থেকেই খেলা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ভারত। ওপেনিং জুটিতে শেফালি ভার্মা ও স্মৃতি মান্ধানার আগুনে ব্যাটিং দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় দর্শকদের। মাত্র আট ওভারেই ৫৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তারা। শেফালির ব্যাটে ঝড় — প্রথম ১৯ বলেই পাঁচটি চার, সঙ্গে কয়েকটি শৈল্পিক ড্রাইভ। অন্যদিকে, মান্ধানার ব্যাটে ছন্দ, সৌন্দর্য আর আক্রমণাত্মক আত্মবিশ্বাস। স্মৃতির সংগ্রহ ৪৫, শেফালির ব্যাটে ৮৭ রানের অনবদ্য ইনিংস। দীপ্তি শর্মাও খেললেন এক মূল্যবান ৫৮ রানের ইনিংস। ইনিংসের শেষভাগে দক্ষিণ আফ্রিকার নাদিন দে ক্লার্ক ও বাঁহাতি স্পিনার ননকুলুলেকো ম্লাবার বোলিং কিছুটা ভারতীয় গতি কমালেও ২৯৯ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল হরমনপ্রীতরা। টার্গেট তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল মন্থর। অধিনায়ক লরা উলফার্ট একাই লড়াই চালিয়ে যান, তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১০১ রানের দুরন্ত সেঞ্চুরি। কিন্তু বাকিরা ব্যর্থ। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে দীপ্তি শর্মা ছিলেন দুরন্ত ছন্দে — তুলে নেন চারটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। পার্ট-টাইম বোলার শেফালি ভার্মাও নেন দুটি উইকেট। ফিল্ডিংয়ে ভারতীয়দের এনার্জি, বোলিংয়ে শৃঙ্খলা এবং জয়ের ক্ষুধাই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দেয়। শেষে ৫২ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারত ইতিহাস রচনা করে। মাঠে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের তিন কিংবদন্তি — ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ ও আনজুম চোপড়া। খেলা শেষে তাঁদের চোখেও জল। বহু বছরের স্বপ্ন পূরণ করল নতুন প্রজন্মের নারী যোদ্ধারা।
Leave a Comment