Breaking News

বন্যার্তদের পাশে মানবসেবায় শিলিগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশন

Image
 

ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি | ৬ নভেম্বর, ২০২৫

প্রবল বন্যায় বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের মানুষের পাশে আরেকবার মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল রামকৃষ্ণ মিশন, শিলিগুড়ি। আজ জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের পোড়াঝার গ্রামে রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত হলো এক বিশেষ ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি, যেখানে মোট ১৮১টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালী সামগ্রী প্রদান করা হয়। বন্যার তাণ্ডবে রাজগঞ্জের বহু গ্রাম এখনও জলমগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত। ঘরবাড়ি, বিছানাপত্র, খাদ্যদ্রব্য সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে রামকৃষ্ণ মিশনের এই পদক্ষেপ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে যেন এক আশার আলো।


ত্রাণে যা যা দেওয়া হলো -

এই কর্মসূচিতে প্রতিটি পরিবারকে নিম্নলিখিত সামগ্রী প্রদান করা হয়—
১. একটি ডাবল মেট্রেস
২. একটি ডাবল বিছানার চাদর
৩. দুটি বালিশ
৪. দুটি বালিশের খোল

সামগ্রীগুলি পেয়ে গ্রামের মানুষদের মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতার হাসি। কেউ কেউ বলেন, “বন্যার পর ঘরে কিছুই ছিল না। রামকৃষ্ণ মিশনের এই সাহায্য আমাদের নতুন করে ঘর গুছিয়ে তুলতে সাহস দিচ্ছে।”


‘জীব সেবাই শিব সেবা’ — মানবসেবার বার্তা দিলেন মহারাজ

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বামী বিশ্বধারণানন্দজি মহারাজ, সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, শিলিগুড়ি। মহারাজ নিজে ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করেন ও গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রেরণাদায়ক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন,

“রামকৃষ্ণ মিশনের মূল আদর্শই হলো— ‘জীব সেবাই শিব সেবা।’ আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই ঈশ্বরসেবা সম্ভব। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়ানো শুধু কর্তব্য নয়, এটি একধরনের উপাসনা।”

তিনি আরও জানান, রামকৃষ্ণ মিশন দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবামূলক কাজ করে চলেছে, এবং আগামী দিনেও এ ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে।


স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্পন্ন কর্মসূচি -

ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সম্পন্ন হয়। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও মিশনের কর্মীরা সকাল থেকেই ত্রাণসামগ্রী প্যাকেজিং, পরিবহন ও বিতরণের কাজে সহযোগিতা করেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তৈরি অস্থায়ী শিবিরে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নেন স্থানীয় মানুষ। কেউ কেউ বয়স্ক, কেউ শিশুদের কোলে নিয়ে এসেছেন— তাঁদের মুখে ক্লান্তি থাকলেও চোখে ছিল কৃতজ্ঞতার আলো।


মানবতার বার্তা ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম জুড়ে -

অনুষ্ঠান শেষে গ্রামবাসীরা একবাক্যে রামকৃষ্ণ মিশন, শিলিগুড়ির প্রতি তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ বর্মন বলেন, “বন্যায় আমাদের ঘর ভেসে গিয়েছিল, কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। আজ মিশনের সাহায্য পেয়ে মনে হচ্ছে নতুন করে শুরু করতে পারব।” 

ত্রাণ বিতরণের পর মিশনের তরফে কিছু কর্মী এলাকায় ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অবস্থা পর্যালোচনা করেন, যাতে ভবিষ্যতে আরও সহায়তার প্রয়োজন হলে তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যায়। দিনভর এই কর্মসূচি জুড়ে একটাই সুর— “মানবসেবার মধ্য দিয়েই ঈশ্বরসেবা।”

Share With:


Leave a Comment

  

Other related news