World Environment Day 2025: বিশ্ব পরিবেশ দিবসে শিলিগুড়ি কলেজে প্লাস্টিক বর্জন, বৃক্ষরোপণ অভিযান

ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: আজ ৫ জুন। ক্যালেন্ডারে নিরিখে বৃহস্পতিবার হলেও আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিনটি পালন করা হয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে। এ বছরের থিম— "প্লাস্টিক দূষণের অবসান", যা বর্তমান বিশ্বে এক জ্বলন্ত সমস্যা। এই দিনটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হ'ল পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও সজাগ করা। প্রকৃতি ছাড়া মানুষের জীবন সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে গাছ, গাছপালা, বন, নদী, হ্রদ, জমি, পাহাড়ের গুরুত্ব বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর শহর শিলিগুড়ির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই দিনটিকে যথাযথভাবে পালন করা হয়। শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বহনকারী শিক্ষাঙ্গণ শিলিগুড়ি কলেজেও এদিন দিনটিকে সামনে রেখে বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে উদযাপিত করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সুজিত ঘোষ, কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা এদিন অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ডঃ বিদ্যাবতি আগরওয়াল, কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অমল রায় সহ বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা।
কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা এদিন অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ডঃ বিদ্যাবতি আগরওয়াল বলেন, "আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে আমরা ও এনএসএস-এর প্রাক্তনী সহ সকল ছাত্রছাত্রীরা শিলিগুড়ি কলেজের প্রাঙ্গণে একটি বকফুল ও দুটি বকুল গাছের চারা রোপণ করলাম। এর আগেও আমরা কলেজে গোলাপজামের চারা গাছ লাগিয়েছি। আমাদের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হল, প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা। কারণ আমরা মানুষরা নিজেদের জীবনকে যাপন করতে পারি, কিন্তু প্রচুর পশু পাখি আছে যারা প্রকৃতির কাছে নির্ভর। ঠিক তাদের কথা মাথায় রেখেই এই ধরণের গাছের চারা আজ রোপণ করা হল। আগামীতেও এধরণের প্রচুর কর্মকাণ্ড মাথায় রয়েছে।"
বলাবাহুল্য, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ (UNGA) বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৩ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন এই দিনটি পালিত হচ্ছে। উদ্দেশ্য— পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর মানুষের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। বিশ্ব পরিবেশ দিবস নিছক একটি প্রথা নয়, এটি এক বিশাল সচেতনতার আন্দোলন। পরিবেশ রক্ষায় সরকার, এনজিও থেকে শুরু করে প্রতিটি সাধারণ মানুষেরই সক্রিয় অংশগ্রহণ আবশ্যক। এই বিশেষ দিনে বৃক্ষরোপণ, প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান, পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি এবং সচেতনতামূলক সেমিনারের মতো উদ্যোগগুলির মাধ্যমে পরিবেশ-বান্ধব জীবনযাত্রার আহ্বান জানানো হয়। নির্বিচারে গাছ কাটা এবং দূষণ বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দূষিত বাতাস মানুষের শ্বাসরোধ করছে। খারাপ পরিবেশের কারণে শহরগুলিতে অনেক মানুষ শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগে ভুগছে। আমাদের বুঝতে হবে যে সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্ব প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। অতএব, একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া মানব সমাজের কল্পনা অসম্পূর্ণ। মানব জীবন কেবল পৃথিবীতেই সম্ভব, তাই এটিকে বাসযোগ্য রাখা আমাদের দায়িত্ব। প্লাস্টিক দূষণ আমাদের গ্রহের মুখোমুখি তিনটি হুমকিকে আরও বড় করে তোলে - জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং দূষণ। প্রতি বছর ১ কোটি ১০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জল বাস্তুতন্ত্রকে দূষিত করে। এই বছর রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP)-র নির্ধারিত থিম হলো "প্লাস্টিক দূষণের অবসান" (End Plastic Pollution)। প্লাস্টিক বর্জ্য এখন আর কেবল মাটি বা সমুদ্রে আবদ্ধ নেই; এটি আমাদের পানীয় জল, খাদ্য, এমনকি মানবদেহেও প্রবেশ করছে, যা এক গভীর উদ্বেগের কারণ। এই থিমের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় স্তরেই প্লাস্টিকের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
Leave a Comment