সুরের জাদুতে শিলিগুড়ি মাতালো 'স্পেশাল ভয়েস অফ বেঙ্গল সিজন ৬'

ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: "হেঁটে চলে ধীরে ধীরে, তবুও তাঁরা হাসে ফিরে। / ভিন্ন একটু তাঁদের বলা, তাতেই ভুবন দেয় যে ধরা।" – আজকের দিনে কবিতার এই দুই লাইন মনে এসে ধরা দেয়। কারণ, ওঁদের মধ্যে কেউ পূর্ণ দৃষ্টিহীন আবার কেউ সামান্য দৃষ্টি নিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে! আর বুধবার শহর শিলিগুড়ির এক বিশিষ্ট সমাজসেবী সংস্থা 'উত্তরের দিশারী' দীনবন্ধু মঞ্চে আয়োজন করেছিল এক অভিনব সঙ্গীত প্রতিযোগিতা – "স্পেশাল ভয়েস অফ বেঙ্গল সিজন - ৬"। মূলত, বিশেষভাবে যাদের চাহিদা সেইসব শিল্পীদের এক মঞ্চ প্রদানই ছিল আসল লক্ষ্য। গোটা রাজ্য থেকে মোট ১৪০ জন প্রতিযোগী প্রাথমিকভাবে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ছিল ১০ জন প্রতিযোগী। আর গতকালের গ্র্যান্ড ফিনালেতে তাঁদের অনবদ্য পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে তোলেন।
প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বে সুরের মূর্ছনায় ভরে ওঠে দীনবন্ধু মঞ্চের প্রতিটি কোণ। এদিনের সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং ভারতের নানা প্রান্ত থেকে সুরের জাদুকররা হাজির হয়েছিলেন। যেমন হাওড়া থেকে অহনা চক্রবর্তী, দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে অমিত কুমার দত্ত, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে অপূর্ব সিং ও রুনু পাল, দার্জিলিং থেকে আশালতা মণ্ডল, শিখা রায়, কাকলি ভট্টাচার্য ও আইজেল তিরকে, এবং পূর্ব বর্ধমান থেকে কানাই ধীবর ও সুপ্রিয়া বিশ্বাসরা তাঁদের সুমধুর কণ্ঠে সেরার সেরা হওয়ার লড়াই করেন।
প্রথম পর্বে নিজ পছন্দ, অতঃপর বিচারকের পছন্দের গানে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন প্রতি প্রতিযোগী। শেষপর্যন্ত প্রতিযোগিতার প্রথম স্থান অর্জন করেন বর্ধমান জেলার কানাই ধীবর, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন দার্জিলিং জেলার কাকলি ভট্টাচার্য এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেন উত্তর ২৪ পরগনার অপূর্ব সিং। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে স্মারক, শংসাপত্র ও আর্থিক পুরস্কার দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। এদিন বিচারকের আসনে ছিলেন প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সত্যজিৎ মুখোপাধ্যায়, গৌরী মিত্র এবং অদিতি চক্রবর্তী। তাঁদের বিচক্ষণ রায় প্রতিযোগিতার মানকে আরও উন্নত করেছে।
এছাড়াও এদিন সঙ্গীত প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সংগঠনের তরফে সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করা সমাজসেবীদের 'উত্তরের দিশারী এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড' প্রদান করা হয়। এই অ্যাওয়ার্ড প্রাপক সমাজসেবক ডঃ পার্থ সাহা ও সমীর দে। পাশাপাশি, এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ি শহরের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের মেডিক্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল ডাঃ কল্যাণ খান, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্ত, নর্থবেঙ্গল হ্যান্ডিক্যাপড্ রিহ্যাবিলিটেশন সোসাইটির সভাপতি শ্যামল দাস এবং নর্থবেঙ্গল হ্যান্ডিক্যাপড্ রিহ্যাবিলিটেশন সোসাইটির সম্পাদক চন্দন ঘোষ। তাঁদের উপস্থিতি এই মহতী উদ্যোগকে আরও মহিমান্বিত করেছে।
Leave a Comment