Breaking News

World Environment Day 2025 - বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনে শিলিগুড়ির বিভিন্ন শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়: প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতনতার বার্তা

Image
 

ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : আজ, বৃহস্পতিবার, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানুষকে প্রকৃতির প্রতি আরও সজাগ করার লক্ষ্যে প্রতি বছর এই দিনটি উদযাপন করা হয়। এ বছরের থিম, "প্লাস্টিক দূষণের অবসান" (End Plastic Pollution), যা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জ্বলন্ত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজ শিলিগুড়ি শহর ও সংলগ্ন এলাকার একাধিক শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে দিনটি উদযাপন করলো। এই বছরের আন্তর্জাতিক থিম "প্লাস্টিক দূষণের অবসান" (End Plastic Pollution)-কে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যৎ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাধ্যমে সমাজে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।

শহরের অন্যতম পরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদ্যাসাগর কলেজ অফ এডুকেশন (Vidyasagar College Of Education - VCE, Siliguri)-এর 'সৃজন ইকো ক্লাব' ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম (NSS) এবং উন্নত ভারত অভিযান (UBA)-এর সহযোগিতায় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীরা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। প্লাস্টিক বর্জনের অঙ্গীকার নিয়ে তারা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ রোপণ করেন। অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ডঃ বিদ্যাবতি আগরওয়াল এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন যে, প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং পশুপাখির কথা মাথায় রেখে এই ধরনের বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। কলেজের অধ্যক্ষা ডঃ সবিতা মিশ্রা এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন যে, প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং পশুপাখির কথা মাথায় রেখে এই ধরনের বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি।

শুধু বিদ্যাসাগর কলেজ অফ এডুকেশনই নয়, শিলিগুড়ি শিক্ষক-শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়েও (Siliguri BEd College) বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনে পিছিয়ে ছিল না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই প্লাস্টিক দূষণ রোধ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের নিজের হাতে তৈরি ১০টি মেহগনি ও অর্জুন গাছের চারা প্রতিষ্ঠানের নিকটবর্তী এলাকায় বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হয়। এছাড়া এলাকাবাসীদের কাছে প্রায় ২৫ টি ওই গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এলাকাবাসীরাও সকলেই খুব উৎসাহের সাথে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং চারা বিতরণের সময় এই দুই রকম গাছের উপকারিতা সম্বন্ধেও তাঁদের জ্ঞাত করা হয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দ্বারা। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড: সারঙ্গীর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান ড: নিতা মিত্র, আই কিউ এ সি সঞ্চালক ড: ঋতুপর্ণা বসাক দাশগুপ্ত এবং অনুষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক কনাদ দত্ত এই সমগ্র কর্মকাণ্ডটির দায়িত্ব নেন।

শিলিগুড়ি শিক্ষক-শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডঃ কনাদ দত্ত বলেন, "আমাদের প্রতিষ্ঠানের আইকিউএসি (IQAC) সারা বছর ব্যাপী বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেই থাকে। তার মধ্যে এই রকম বিশেষ দিন গুলিতে আমরা চেষ্টা করি কোনো না কোনো ভাবে প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেশী অঞ্চলের বসবাসকারীদের যোগদান করাতে। তার জন্যই এই বছর আমাদের এই ভাবনা। তার সাথে আমাদের প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যেও প্রকৃতিপ্রেম আর বিভিন্ন কাজের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য তাদের দিয়েই এই বছর গাছের চারা তৈরি করানো হয়েছে। আমরা চাই আমাদের প্রতিষ্ঠান ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সবুজ ও সুস্থ থাক।"

শিক্ষার্থীরা জানান, পরিবেশ সংরক্ষণে তাদের দায়বদ্ধতা অপরিহার্য। প্লাস্টিক বর্জ্য যে শুধু মাটি ও সমুদ্রে নয়, বরং পানীয় জল, খাদ্য এবং মানবদেহেও প্রবেশ করছে, এই বিষয়টি নিয়ে তারা বিশেষভাবে চিন্তিত। এই সমস্যার সমাধানে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় স্তরেই প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়।

এই মর্মে জানিয়ে রাখা ভালো, বিশ্ব পরিবেশ দিবস (World Environment Day - WED) প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয়, যা পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা এবং কর্মের আহ্বান জানায়। এর ইতিহাস শুরু হয়েছিল বেশ কিছু দশক আগে, যখন পরিবেশগত উদ্বেগ আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠে আসতে শুরু করে।

  • পটভূমি ও সূচনা: ১৯৭২ সাল: সুইডেনের স্টকহোম শহরে ৫ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের মানব পরিবেশ সম্মেলন (United Nations Conference on the Human Environment - UNCHE) অনুষ্ঠিত হয়। এটিই ছিল প্রথম বিশ্বব্যাপী সম্মেলন যা পরিবেশের সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আয়োজিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে মানব পরিবেশের উপর একটি ঘোষণাপত্র (Declaration on the Human Environment) গৃহীত হয়, যা পরিবেশ সুরক্ষা ও উন্নয়ন সম্পর্কিত ২৬টি নীতি নিয়ে গঠিত ছিল। এই সম্মেলনেই, ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (UNGA) একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ৫ জুন তারিখটিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশগত সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সরকার ও মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা। ১৯৭৩ সাল: বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রথম পালিত হয়। সেই বছর থেকে প্রতি বছর ৫ জুন এই দিনটি নিয়মিতভাবে পালিত হয়ে আসছে।
  • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পরিবেশ দূষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বিশ্ব উষ্ণায়ন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, সমুদ্র দূষণ, টেকসই ব্যবহার এবং অপরাধমূলক পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করা। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করা হয়, যা একটি নির্দিষ্ট পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের উপর আলোকপাত করে এবং সেই বিষয়ে বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপের জন্য অনুপ্রাণিত করে।
  • বিশেষ দিক: প্রতি বছর একটি ভিন্ন দেশ এই দিবসের বৈশ্বিক আয়োজক হিসেবে কাজ করে, যা সেই দেশের পরিবেশগত প্রচেষ্টা এবং চ্যালেঞ্জগুলিকে তুলে ধরে। এই দিনে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সচেতনতামূলক সেমিনার, র‌্যালি এবং অন্যান্য পরিবেশ-বান্ধব কার্যক্রমের আয়োজন করে। এই দিবসটি শুধুমাত্র সরকার বা পরিবেশ সংস্থাগুলোর জন্য নয়, বরং প্রতিটি ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সংস্থার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যাতে তারা পরিবেশ রক্ষায় তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ধীরে ধীরে একটি প্রতীকী দিন থেকে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, যা প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং একটি সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকারকে প্রতি বছর নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।

Share With:


Leave a Comment

  

Other related news