এসআইটি ক্যাম্পাসে 'শুভারম্ভ ২০২৫': নবাগতদের নিয়ে উৎসবমুখর ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম
ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ - শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ক্যাম্পাসে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের নবাগত ছাত্রছাত্রীদের জন্য আয়োজিত হয়েছে বিশেষ ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম ‘শুভারম্ভ ২০২৫’। কলেজের উদ্যোগে এই আয়োজন নতুন শিক্ষার্থীদের কলেজ জীবনের প্রথম দিনে পথ দেখানোর উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১ অগাস্ট অর্থাৎ শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই প্রোগ্রামে প্রতিটি বিভাগ অনুযায়ী নির্ধারিত সময় ও স্থানে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। BBA ও BBA-ATA বিভাগের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয় স্যার জে.সি. বোস সভাকক্ষে সকাল ১০:৩০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, যেখানে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক নবাগত শিক্ষার্থী। এরপর দুপুর ১:৩০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত একই স্থানে BCA বিভাগের ওরিয়েন্টেশন পর্ব পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, BHHA বিভাগের ওরিয়েন্টেশন হয় এফ অ্যান্ড বি ল্যাবে, এবং BBAHM বিভাগের সেশন অনুষ্ঠিত হয় ডঃ এ.পি.জে. আব্দুল কালাম সভাকক্ষে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এরপর মনোবিজ্ঞান (Psychology) বিভাগের ওরিয়েন্টেশন একই সভাকক্ষে হয়। তবে সেই পর্ব বিকেল ২টা থেকে ৪:৩০টা পর্যন্ত চলে। এছাড়া Cyber Security ও B.Sc. Computer Science বিভাগের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয় ডিপার্টমেন্টাল সেমিনার সভাকক্ষে বিকেল ২:৩০টা থেকে ৪:৩০টা পর্যন্ত, সেখানে বিপুল সংখ্যক নবাগত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
কলেজের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানগণ এদিনের এই বর্ণাঢ্য ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের সুষ্ঠু পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তা নিপুণ দক্ষতায় সম্পন্ন করেন। প্রফেশনাল স্টাডিজের প্রতিটি বিভাগের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত হন বিভিন্ন খ্যাতনামা ও বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধিগণ, পাশাপাশি কলেজের গর্ব—সফল প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরাও। তাঁরা তাঁদের কলেজ জীবনের শুরু থেকে শুরু করে বর্তমান কর্মজীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন নবাগতদের সঙ্গে, যা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিঃসন্দেহে এক মূল্যবান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, প্রতিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা কলেজের শৃঙ্খলা, পাঠক্রমের কাঠামো, সিলেবাস সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা, ল্যাব ও ইন্ডাস্ট্রি এক্সপোজার, উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং ক্যারিয়ার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে শুধু একজন শিক্ষক নন, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রশ্ন করার আগ্রহ জাগাতে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে তারা উদারভাবে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবাগত শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন কলেজ জীবনের নানান দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করে, অন্যদিকে তেমনি ভবিষ্যতের পথচলার একটি সুস্পষ্ট রূপরেখাও পেয়ে যায়।
মোটের ওপর প্রাথমিক পর্যায়ে অসংখ্য নবাগত শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম উৎসাহ ও উৎসবের আবহে সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পাস, নিয়মনীতি, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং একাডেমিক পরিবেশ সম্পর্কে প্রত্যেককে অবগত করার মাধ্যমে ‘শুভারম্ভ’ প্রোগ্রামটি নবাগতদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে।
শুভারম্ভ ২০২৫: এসআইটি-র নবীনদের স্বাগত জানিয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের সূচনা
শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রফেশনাল স্টাডিজের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ অরুন্ধতী চক্রবর্তী বলেন, “এসআইটি-র পক্ষ থেকে প্রতিবছরের মতো এবারও নবীন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। এবারের অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে ‘শুভারম্ভ ২০২৫’। গতকাল, শুক্রবার থেকে এই বিশেষ কর্মসূচির শুভ সূচনা হয়েছে। বলা যেতে পারে, আগামী চার বছরের শিক্ষা-জীবনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হল এই প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে।” তিনি আরও বলেন, “১ অগাস্ট থেকে শুরু হওয়া এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে আগামী ১৫ দিনে নবাগত ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে দিশা দেখানো হবে। শুধু একাডেমিক পাঠ্যক্রম নয়—যোগব্যায়াম, খেলাধুলা, ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা হওয়ার পথ, কর্পোরেট জগতের অন্তর্জগৎ, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা, বিনিয়োগ ক্ষেত্র এবং ব্যাঙ্কিং সেক্টরের মতো বাস্তবমুখী বিষয়গুলির সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এসে তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবেন, যা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় দিশা দেখাবে।”
ডঃ চক্রবর্তী বলেন, “শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বরাবরই ছাত্র-কেন্দ্রিক শিক্ষাদানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তাই মূল কোর্স শুরু হওয়ার আগে আমরা একটি ‘ব্রিজ কোর্স’ চালু করি। এই কোর্সের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পূর্বপ্রাপ্ত জ্ঞান কতটা বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুত, তা যাচাই করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাগত পটভূমি থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিখণের যে বৈষম্য থাকে, তা দূর করা যায়।” তিনি এও জানান, ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা ও পূর্বঅভিজ্ঞতা অনুসারে এসআইটি কর্তৃপক্ষ তাঁদের জন্য আগামী চার বছরের একটি সুপরিকল্পিত ‘রোড ম্যাপ’ প্রস্তুত করে দেয়, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের লক্ষ্যে সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে।
পাশাপাশি, শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্টের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ জয়দীপ দত্ত বলেন, “আজ আমার নিজের ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমরা যেদিন প্রথম কলেজে গিয়েছিলাম, সেদিন আমাদের মনে বিভিন্ন রকম ভয় কাজ করেছিল। সিনিয়ররা কেমন হবে, মাস্টারমশাইরা কেমন হবে, ক্লাসগুলোই বা কোথায় হবে, কিভাবে সেখানে পৌঁছোব, নতুন বিষয়, নতুন পড়াশোনা সেগুলিই বা কেমন হবে — এইসব চিন্তা আমাদেরকে গ্রাস করেছিল।” তিনি বলেন, “কিন্তু বর্তমানে এইসব চিন্তা আর কোনও বাধা নয়। কারণ, আমাদের কলেজে প্রতিবছরই নবাগতদের জন্য যেভাবে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়, তা তাঁদের আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক প্রস্তুতি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।”
ডঃ দত্ত আরও জানান, “একজন ছাত্র-ছাত্রী যখন স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে প্রথম প্রবেশ করে, তাঁরা শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকলেও, মানসিকভাবে অনেক দিক থেকেই প্রস্তুত থাকে না। কলেজ জীবনের শুরুতে একধরনের অজানা আতঙ্ক কাজ করে তাদের মনে। তাই আমরা শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পক্ষ থেকে এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করি, যাতে তাঁরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাঁদের যাত্রা শুরু করতে পারেন।” তিনি বলেন, “এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্যই হলো নবাগতদের সঙ্গে সিনিয়র শিক্ষক-শিক্ষিকা, বিভাগীয় প্রধান, প্রশাসনিক আধিকারিক, এমনকি সিনিয়র ছাত্রছাত্রীদের একাত্ম করে তোলা, যাতে তাঁরা কলেজ জীবনের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এই অনুষ্ঠানে কলেজের ইতিহাস, নিয়মনীতি, একাডেমিক কাঠামো, ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ক্যাম্পাস লাইফ এবং সম্ভাব্য ক্যারিয়ার সুযোগ সম্পর্কে বিশদ ধারণা প্রদান করা হয়।” জয়দীপবাবুর কথায়, নবাগতদের ৩৬০ ডিগ্রী ওভারভিউ প্রদান করে তাঁদের মানসিক প্রস্তুতি ও দৃষ্টিভঙ্গিকে বিস্তৃত করায় এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক পদক্ষেপ। এটি শুধু কলেজ জীবনের সূচনাই নয়, বরং জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশের সাহস জোগানোর এক অভিজ্ঞানও বটে।
নবাগতদের জন্য আত্মবিশ্বাসের প্রথম ধাপ — এসআইটি-তে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের অনন্য উদ্যোগ
অন্যদিকে, শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রশাসক (Administrator) শ্রী তমাল গুহ বলেন, “ ‘শুভারম্ভ ২০২৫’ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি ছাত্রছাত্রীদের মানসিক প্রস্তুতির জায়গা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু করে। কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করাই ভবিষ্যতের সফলতার চাবিকাঠি। শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে কেবল একাডেমিকভাবে নয়, মানবিক মূল্যবোধেও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি সকল নবাগত শিক্ষার্থীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করি।”
এদিন তমালবাবু সমস্ত বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী এবং প্রশাসনিক ও কারিগরি বিভাগে যুক্ত সকল স্তরের কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “এত বড় একটি অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে সকলের মিলিত প্রয়াস, নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়ন এবং প্রতিটি ক্ষুদ্র বিষয়ে নজর দেওয়ার যে নিষ্ঠাবান প্রচেষ্টা এই অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।”
এছাড়াও, এদিন শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রফেশনাল স্টাডিজ বিভাগের অন্তর্গত বিভিন্ন শাখায় এদিন একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান করা হয়। এই সম্মাননা শুধুমাত্র পরীক্ষার ফলাফল বা পড়াশোনার নিরিখে নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত উপস্থিতি, প্রকল্পে অংশগ্রহণ, প্রেজেন্টেশন দক্ষতা, গ্রুপ অ্যাক্টিভিটিজে পারফরম্যান্স সহ সামগ্রিক একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। একটি কঠোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়, যা তাঁদের একাডেমিক জীবনকে আরো উৎসাহিত ও গতিশীল করে তুলবে বলে মনে করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপকগণ মনে করেন, এই ধরনের স্বীকৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতার মানসিকতা তৈরি করে এবং একাগ্রচিত্তে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। এছাড়াও, এই পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অন্যদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে, যারা ভবিষ্যতের কর্মজীবনে আত্মবিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়। শিক্ষাজীবনের এই প্রাথমিক পর্যায়ে পাওয়া স্বীকৃতি তাঁদের মানসিক জগতে গভীর প্রভাব ফেলে এবং ভবিষ্যতের একজন দক্ষ ও দায়িত্বশীল পেশাজীবী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তা পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে।
Leave a Comment